Search This Blog

TIP'S CETAGORY WITH LANGUAGE

Tips 4 pc

Update Software

Wednesday, July 7, 2010

ত্বকের সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার

ত্বকের সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকারত্বকে সাধারণত যে ধরনের সমস্যা হয়_এর কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. মাহমুদ চৌধুরী। গ্রন্থনা করেছেন নাহিদ লিয়া ও ইমাম হোসেন

কম-বেশি ত্বকের সমস্যায় ভুগে থাকেন প্রায় সবাই। স্ক্যাবিস, একজিমা, ঘামাচি, ব্রণ, দাদ ইত্যাদি খুব পরিচিত কয়েকটি ত্বকের অসুখ।

স্ক্যাবিস বা চুলকানি
স্ক্যাবিস রোগটি চুলকানি নামে পরিচিত। এটি ছোঁয়াচে রোগ। একধরনের পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ দেখা দেয়। বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কম থাকেন, তাদের এ রোগ বেশি হয়। এ রোগটি আমাদের দেশে অনেক বেশি দেখা যায়।
যেভাবে ছড়ায়
স্পর্শের মাধ্যমে সাধারণত এ রোগ ছড়ায়। তা ছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
* সারা শরীর চুলকাতে পারে, তবে আঙুলের ফাঁকে, নিতম্বে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কবজিতে, এক্সিলাতে (বগল ও নাভি) এবং কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয় এবং পরেও এ স্থানগুলোতেই সমস্যা বেশি থাকে।
* চুলকানি রাতে বেশি অনুভূত হয়
* ছোট ছোট ফুসকুঁড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল বের হতে পারে।
* চুলকানির ফলে ক্ষত হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।
প্রতিরোধ
* যেহেতু পরিবারের একজনের হলে অন্যদের হওয়ার ঝুঁকি থাকে; তাই রোগীর যেকোনো ধরনের চুলকানি হলে তার বিছানা ও অন্যান্য ব্যবহৃত কাপড় আলাদা করতে হবে।
* সুস্থ লোকদের সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে না আসা উচিত।
চিকিৎসা
প্রধান ও খুব কার্যকরী চিকিৎসা_পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। নিয়মিত রোগীর বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও ব্যবহৃত অন্যান্য কাপড় গরম পানিতে ফুটিয়ে পরজীবীমুক্ত করতে হবে। রোগ সারার পরও রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র এভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এ রোগের চিকিৎসা পরিবারের সবার একসঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।

একজিমা
এটি একধরনের চর্মরোগ, যা সাধারণত পরিবারের কারো থাকলে অথবা অ্যাজমা কিংবা অ্যালার্জির কারণে সব সময় সর্দি থাকলে হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ রোগটিও রোগীর সংস্পর্শে এলে বা রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করলে হতে পারে।
লক্ষণ
* মুখে, গলায়, বুকে, পিঠে, হাতের কবজি এবং হাঁটু ও কনুইয়ের ভাঁজে সাধারণত একজিমা দেখা দেয়।
* এক বছরের নিচের শিশুদের প্রথমে গালে দেখা দেয় ও পরে তাদের মুখে এবং বুকে-পিঠে হয়।
* শিশু-কিশোরদের পিঠে, হাঁটু ও এলবো জয়েন্টে একজিমা দেখা দেয়।
* প্রাপ্তবয়স্কদের বুকে, পিঠে ও মুখে বেশি হয়।
* আক্রান্ত স্থান লাল হবে এবং কিছু ফুসকুঁড়ি দেখা দেবে। কোনো কোনো রোগীর পেপিউলাস থেকে রসনিঃসৃত হতে পারে।
* স্থানটি চুলকাবে, চুলকানি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
* আক্রান্ত স্থানটির চামড়া শুষ্ক হবে এবং চামড়াটি অমসৃণ হয়ে যায়।
* দুধ, ডিম ও নারকেল খেলে কারো কারো উপসর্গ বেশি দেখা যায়।
প্রতিরোধ
শুষ্ক আবহাওয়ায় রোগটির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। দৈনিক দুবার গোসল করে নরম সুতি কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে স্থানটিতে ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখতে হবে।
* স্থানটিতে সাবান যত কম লাগানো যায় ততই ভালো।
* স্থানটি শক্ত কাপড় দিয়ে ঘষা বা চুলকানো উচিত নয়।
চিকিৎসা
চুলকানি তীব্র হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।

সোরিয়াসিস
এই রোগে কোনো ইনফেকশন হয় না, কিন্তু চামড়ায় ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) হয় এবং চামড়ার কিছু জায়গা লাল হয় ও এর ওপরে একটি উজ্জ্বল রুপালি আবরণ পড়ে। এ রোগটি সাধারণত ১০ বছর বয়সের নিচে হয় না এবং মূলত ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের বেশি হয়।
কেন হয়
দেহের কোনো স্থানে আঘাত পেলে এবং সেখানে ইনফেকশন হলে সেই ইনফেকশন থেকে সোরিয়াসিস হতে পারে। তীব্র আবেগ ও দুশ্চিন্তার কারণেও এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
* হাঁটু, কনুই ও মাথায় এ রোগটি সবচেয়ে বেশি হয়, তবে নখেও হয়ে থাকে। এ ছাড়া হাত ও পায়ের তালুতেও এ রোগটি দেখা দেয়।
* আক্রান্ত স্থানটি লাল হবে এবং এর ওপরে একটি উজ্জ্বল রুপালি আবরণ দেখা যাবে।
* কোনো কোনো ক্ষেত্রে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি ফুলে যেতে পারে ও ব্যথা হতে পারে।
* মাথায় হলে খুসকির মতো হবে এবং কিছু অংশ ফোলা মনে হবে, যা হাত দিয়ে ধরলে অনুভূত হবে। অনেক বেশি হলে চুল উঠতে থাকবে।
* নখে ছোট ছোট গর্তের মতো হতে পারে এবং বেশি মাত্রায় হলে নখ আলগা হয়ে ওঠে আসতে পারে।
চিকিৎসা
রোগীকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

ব্রণ
ব্রণ সাধারণত ছেলেদের ১৭ থেকে ১৯ বছর বয়সে এবং মেয়েদের ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে বেশি হয়। বয়ঃসন্ধিকালের কমন সমস্যা এটি। অনেকের পরেও ব্রণ হতে পারে।
কেন হয়
অ্যানড্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে সাধারণত হয়ে থাকে। তেল বা ক্রিমের জন্যও ত্বকে ব্রণ হতে পারে। এ ছাড়া কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধের কারণেও হতে পারে।
উপসর্গ
* ব্রণে অল্প ব্যথা হতে পারে।
* চুলকানি এবং ক্ষত হতে পারে।
* লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের সিক্রেশন জমা হয়েও ব্রণ হয়।
প্রতিরোধ
* ব্রণের ক্ষতগুলোতে যাতে ইনফেকশন না হয় সে জন্য তাতে নখ দিয়ে খোঁটা যাবে না।
* মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে।
* প্রসাধনী ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
চিকিৎসা
নিয়মিত প্রচুর শাকসবজি ও পানি খেতে হবে এবং নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। এ ছাড়া ব্যায়াম করলে কিছু উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।

আর্টিকেরিয়া বা চাকা হওয়া
হঠাৎ স্থানীয়ভাবে কিংবা সারা দেহের ত্বক যদি ফুলে যায়, চুলকায় ও জ্বালাপোড়া করে, তবে তাকে আর্টিকেরিয়া বলে। এ রোগটি সাধারণত অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে।
কেন হয়
অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। কিছু কিছু খাদ্য যেমন_গরুর মাংস, দুধ, ডিম, নারকেল, ইলিশ মাছ ইত্যাদি খেলে হয়। এ ছাড়া আবহাওয়ার কারণেও হতে পারে।
লক্ষণ
* শরীরের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়া অথবা সারা দেহের চামড়া চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায়, চুলকায় ও লাল হয়ে যায়।
* বেশি আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* মাথা ঘোরাতে পারে এবং বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
* রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
চিকিৎসা
রোগীকে অবশ্যই গোসলের সময় অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড যেমন স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দাদ
শরীরের যেকোনো স্থানে গোলাকার চাকা দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পিঠ, মাথা কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি দেখা যায়। ত্বকের ফাঙ্গাস
পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ খুব সহজেই নিরূপণ করা সম্ভব। চিকিৎসায় এ রোগ ভালো হয়। সাধারণত টিনিয়া করপোরিস ও টিনিয়া ভার্সিকোলর_এ দুই ধরনের দাদ বেশি হতে দেখা যায়।
টিনিয়া করপোরিস
সাধারণত দেহের যেসব স্থান কাপড় দিয়ে ঢাকা হয় না, যেমন_মুখ, হাত সেসব স্থানে টিনিয়া করপোরিস হয়ে থাকে।
লক্ষণ
* লাল একটি আংটির মতো হয়ে যাবে। অংশটির বর্ডার উজ্জ্বল হবে এবং মাঝখান পরিষ্কার থাকবে।
* শরীরের উন্মুক্ত স্থানের চামড়ায় হয়।
* স্থানটি চুলকায়।
চিকিৎসা
স্থানটি পরিষ্কার রাখতে হবে এবং দিনে দুবার গরপড়হধুড়ষ ২% ঈৎবধস দিয়ে মালিশ করতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টিনিয়া ভার্সিকোলর
এটি সাধারণত দেহের যেসব স্থান ঢাকা থাকে, সে জায়গায় হয়ে থাকে। ঘাম ও ময়লা থেকেও টিনিয়া ভার্সিকোলর হয়ে থাকে।
লক্ষণ
* সাধারণত বুক ও পিঠের চামড়া এবং গলায় হয়ে থাকে।
* চামড়ার ওপর চক্রাকার ও লাল আবরণ দেখা যায়।
* চামড়া গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়।
* চামড়া মোটা বা ভারী হয়ে যায়।
চিকিৎসা
সেলসান শ্যাম্পু গলা থেকে হাতের কবজি পর্যন্ত মেখে ৫ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দৈনিক একবার করে সাত দিন, সপ্তাহে একবার করে এক মাস এবং এরপর থেকে মাসে একবার করে এ চিকিৎসা নিতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

ঘামাচি
বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি, এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ঘর্মগ্রন্থির রোগ। এটি মূলত খুব ছোট ছোট দানার মতো হয়ে থাকে।
কেন হয়
অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে ঘর্মগ্রন্থিনালি বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগটি গ্রীষ্মকালে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে। ফলে ঘামাচির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
লক্ষণ
* এই ঘাম নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে।
* প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়ার ভাব থাকে।
চিকিৎসা
ঘামাচির মূল চিকিৎসা হলো গরম আবহাওয়ার বিপরীতে ঠাণ্ডা পরিবেশে বসবাস করা। যেমন_এয়ারকন্ডিশন করা ঘরে বসবাস। আর যদি এ ব্যবস্থা সম্ভব না হয়, তাহলে যতটা সম্ভব ফ্যানের বাতাসের নিচে থাকতে হবে। যেন ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস আসতে পারে। এ ছাড়া হাইড্রোকর্টিসোল ১% ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি কমে যাবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Tips Of All Sorts