Search This Blog

TIP'S CETAGORY WITH LANGUAGE

Tips 4 pc

Update Software

Tuesday, August 10, 2010

রঙের ভুবন

রঙের ভুবন

রঙ জীবনের স্বপ্ন দেখায়। জীবন যেখানে থেমে যায় রঙ সেখান থেকেই নতুন করে পথ চলা শুরু করে। তাই ঘরের ভেতর স্বপ্ন অাঁকতে হলে প্রয়োজন রঙের যথার্থ ব্যবহার। আপনার ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হলে রঙের সাহায্য নিতে হবে কৌশলে। আমরা অনেক সময় জীবনকে কল্পনা করি রঙের বাইরে। সেই কল্পনা কখনো বাস্তব রূপ পায় না রঙ সাহায্যকারী না হলে। ঘরের ভেতর প্রতিদিন যে জীবন সেই জীবনে রঙ তাই স্পর্শের বাইর কিছু নয়। যেখানে যাবেন যা দেখবেন সর্বত্রই আছে রঙের বাহার। পৃথিবীতে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে রঙ নেই। মনে রাখতে হবে যেখানে রঙের অভাব সেখানেও সৃষ্টি হয় একটি রঙ যাকে আমরা কালো বলি। ঘর সাজাতেও রঙের ব্যবহার বিশ্বজুড়ে। তবে ঋতু বৈচিত্র্যের এ দেশে আমরা গ্রীষ্ম প্রধান বলে বেশির ভাগ সময় ঠাণ্ডা রং পছন্দ করি। জাতিগতভাবে আমাদের ভিতরে রঙের প্রভাব সবসময় কাজ করে না। তাই ঘরের ভেতর খুব বেশি রঙের ব্যবহার আমাদের ঐতিহ্যে নেই। তবে এখন আমরা যত বেশি ইন্টেরিয়র সচেতন হচ্ছি তত বেশি রঙের ব্যবহার বাড়ছে। ঘর সাজাতে হালকা রঙের ব্যবহার স্বীকৃত হলেও উজ্জ্বল রঙ যে ব্যবহার করা যাবে না, তা কিন্তু নয়। টিভি নাটক কিংবা সিরিয়াল দেখে আমাদের কল্পনা শক্তিতে ঘরের ভেতর এখন লাল, কমলা, নীল, সবুজ ইত্যাদি নানা উজ্জ্বল রঙ স্থান করে নিয়েছে। শুধু দেয়ালের রঙে নয় বরং নতুন নতুন ফ্যাব্রিক বাজারে আসছে চোখধাঁধানো রঙের বাহার নিয়ে। রঙের নানাবিধ ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন তামান্না শারমীন
রঙের ধরন
ঘরের ভেতর রঙ ব্যবহারের আগে রঙের উত্তাপ সম্পর্কে জানা উচিত। ভাবতে পারেন রঙের আবার উত্তাপ হয় কিভাবে! রঙেরও ভাষা আছে। কোনো কোনো রঙ দেখে মনে হয় এ যেন তাপদাহ, কখনো তা ঠাণ্ডা শীতল স্পর্শ। আমাদের চারিদিকে যেই রঙ তার কোনটা গরম কোনটা শীতল। যেমন লাল, কমলা, হলুদ রঙ গরম অনুভূতি দেয় আর সবুজ ও নীল রঙ শীতল অনুভূতি দেয়। নীল ও সবুজ রঙ দেখলেই খোলা নীল আকাশ আর খোলা মাঠের সবুজকে মনে পড়ে। তাই একটা ছায়া শীতল অনুভূতি আমাদের স্পর্শ করে যায়। অন্য দিকে লাল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি রঙ সূর্য কিংবা আগুনের স্পর্শ দেয়। ঘরের ভেতর যদি শান্তিময় স্পর্শ দিতে চান তবে এই রঙের বিন্যাস নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে খানিকটা। এক্ষেত্রে হলুদের সঙ্গে যদি সবুজের কম্বিনেশন করেন তবে সবুজ ধানের শীষের পাশে হলুদ সর্ষে ফুল ফুটে উঠতে পারে। আবার ড্রয়িং রুমে চিরবিদ্রোহের রূপ দিতে লালের পাশে হলুদ হয়ে উঠতে পারে শাহাবুদ্দিনের কোনো চিত্রকর্ম। এর পাশাপাশি যদি ব্যবহার করেন ল্যামন ইয়েলো তবে আপনার ঘরে বিদ্রোহের পাশাপাশি শান্তির বসবাস নিশ্চিত হবে।
রঙের মেজাজ
ঘরে ঢুকেই যদি গিনি্নর মেজাজ চড়া থাকে তবে দেয়ালের রঙ কিংবা ফ্যাব্রিক তার মাঝে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। আবার বাইরের হাওয়ার শীতল পরশ যদি ঘরের রঙে মেলে তবে যে কোন উত্তপ্ত মস্তিষ্ক মুহূর্তেই ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। আপনার ঘরের রঙ বাইরের মানুষকে আপনার মেজাজের জানান দিয়ে দেয়। যদি আপনার ঘরের ইন্টেরিয়রে উজ্জ্বল রঙ প্রাধান্য পায় তবে ধরে নিতে হবে আপনি চলনে আধুনিক, বলনে আগ্রাসী, বসনে স্টাইলিস্ট আর অতিথি আপ্যায়নে রঙিন একজন। মেজাজ তৈরি বা মেজাজ পরিবর্তনে রঙের যে একটা ভূমিকা আছে তা গবেষণাতেও প্রমান পাওয়া গেছে। দেখা গেছে আনন্দ, আশা, হতাশা, আকাঙ্খা, দুঃখবোধ ইত্যাদি আবেগের নানা শ্রেণীবিভাগ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম রঙের নানা ব্যবহার। তাই ঘরের ভেতর রঙ ব্যবহার করতে হলে আবেগের মূল্য দিয়ে তা যাচাই করে নিতে হবে। অন্দর-সজ্জার সময় মনে রাখবেন হলুদ রঙ এবং হলুদের অধিকাংশ শেড নিয়ে আসে খুশির আমেজ। সোনালি রঙেও একই এফেক্ট পাওয়া যায়, একই সঙ্গে থাকে ঐশ্বর্যের ধারা। কমলা রঙ আনন্দ আনে একই সঙ্গে আনে একটা গরম অনুভূতি। এইসব রঙ খুশির অনুভূতির পাশাপাশি নিউট্রাল কালার হিসেবেও কার্যকরি। অন্যদিকে লাল রঙ আদিম প্যাশনের প্রতীক। প্রেম, আকাঙ্ক্ষা দূনির্বার ইচ্ছাশক্তির সবটুকুই আছে লাল রঙের প্রতিটি কণায়। লাল আনন্দ আনে তাই শান্তি আনে না। যদি লালের প্রতি আপনার ভক্তি থাকে তবে লাল রঙ ব্যবহার করুন অন্য রঙের সঙ্গে সহায়ক শক্তি হিসেবে। যেমন লালের সঙ্গে গোলাপির বসবাস আপনাকে দেবে শক্তির সঙ্গে রোমান্সের সম্পর্ক। আপনি হয়ে উঠবেন আরো বেশি রোমান্টিক। আর লালপ্রেমী নন, কিন্তু রহস্যময়ী তাদের জন্য বেগুনি কিংবা বেগুনির নানা শেড কাজ করবে আরো ব্যাপকভাবে। এছাড়াও রঙের আছে আরো ভুবন। যেমন নীল রঙ মানেই শান্ত ও রোমান্টিক পরিবেশ। সবুজ আনে তাজা ও ঝরঝরে অনুভূতি। বাদামির বিভিন্ন শেড, চকলেট, কাঠের নিজস্ব রঙ আনে প্রকৃতি আর রুচির সমন্বয়। সাদাকালো এবং ধূসর রঙ ঠাণ্ডা আমেজ নিয়ে আসে এবং নিউট্রাল কালার হিসেবে পরিচিতি দেয়। কালো রঙের ব্যবহারে রহস্যময়তা তৈরি হয়। বুদ্ধির সঙ্গে কালো রঙ ব্যবহার করলে ঘরের পরিবেশে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। সাদা, অফ হোয়াইট, ক্রিম রঙের ব্যবহার ক্ল্যাসিক, অভিজাত, বিলাসী ইত্যাদি নানা মিশ্র অনুভূতি দেয়।
রঙের বাহার
রঙ সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হওয়ার পর যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় তা হচ্ছে রঙ ছড়িয়ে দেয়া। ঘরের ভেতর রঙ ব্যবহূত হয় এমন উপাদান অনেকগুলো, যেমন ফ্লোরিং, জানালা, দরজা, পর্দা, দেয়াল, বেড কাভার, ফার্নিচার সবকিছুর জন্য রঙ হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নের সন্ধান দানকারী। রঙ বাছাইয়ের পূর্বে রঙ কতগুলো নেবেন তা নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা ঘরের ভেতর রঙের বাজার বসিয়ে আপনার লাভ নেই যদি না এশিয়ান পেইন্ট কিংবা বার্জারের ডিরেক্টর তা দেখতে আসেন। আপনার ঘর আপনার, তবুও আপনার ঘরে অন্যের রুচির প্রভাব ফেলে। তাই রঙ করতে হলে একটি দুটি কিংবা তিনটির বেশি রঙের উপাদান ভাববেন না। মনে রাখবেন রঙের সমন্বয় যেমন গ্রামার মেনে হয় তেমনি রুচি মেলালেও গ্রামার তৈরি হয়। আপনার মুড, ঘরের আসবাবের ধরন, ঘরের সাইজ, টাইলস বা দেয়ালের ধরন ইত্যাদি আপনার রঙ সিলেকশনে ভূমিকা রাখবে।

ফ্ল্যাট বা বাড়ি যাই হোক না কেন রঙ বাছাইয়ে তার মাপের উপর খেয়াল রাখতে হবে। যে কোনো স্থান আয়তনে কিছুটা বড় দেখায় বারবার একই রঙের ব্যবহারে। আবার শীতল রঙ ব্যবহার করলে স্পেস কিছুটা হলেও চোখের আয়তনে বেড়ে যায়। অন্যদিকে ওয়ান কালার ব্যবহার করলে ঘর ছোট হয়ে ওঠে। আবার ছোট জায়গার দেয়াল সাদা রঙে অনেক বড় দেখায়। ছাদ আর ফ্লোর দুটোই যদি সাদা হয় তবে দৃষ্টিসীমা বেড়ে যায় বলে ঘর বড় মনে হয়। ঘরের রঙ আপনার পছন্দকে প্রতিনিধিত্ব করে তাই রঙ নির্বাচনে আপনার সিদ্ধান্ত যেমন চুড়ান্ত তেমনি রঙ দেখে আপনার সম্পর্কে অন্যের ভাবনাও চূড়ান্ত। রঙ করার কেউ যেন আপনাকে না ভাবে আপনার ঘরটি জোকারের জামা-কাপড়। আপনার ঘর যেন আপনার রুচির সঠিক আয়না হয়।

No comments:

Post a Comment

Tips Of All Sorts