অ্যালার্জি : প্রতিরোধ সম্ভব
সিনিয়র কনসালটেম্লট ও বিভাগীয় প্রধান
অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
পৃথিবীর সর্বত্র অ্যালার্জি একটি বহুবিস*ৃত রোগ। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ব্যক্তিজীবনের কোনো না কোনো সময় অ্যালার্জিতে আক্রান্* হয়। অ্যালার্জির কারণ বহুবিধ। এর উপসর্গ অনেক রকম—মৃদু থেকে মারাত্মক এবং জীবন সংহারী হতে পারে। অ্যাজমা রোগের উত্পত্তি এবং বিস*ারের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে অ্যালার্জি। সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ অ্যালার্জির উপযুক্ত চিকিত্সা আবিষ্কৃত হয়েছে।
অ্যালার্জির সংজ্ঞা
অ্যালার্জি সংঘটিত হয় যখন কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধক শক্তি পরিবেশের কোনো বস*ুর উপস্থিতির কারণে প্রতিক্রিয়া সৃ*ি করে। অথচ ওই বস*ুগুলো অন্য আরেকজন লোকের মধ্য থেকে প্রতিক্রিয়া সৃ*ি করতে পারে না। এই বস*ুগুলোকে বলা হয় অ্যালার্জেন। অ্যালার্জেন দেখা যায় ঘরের ধুলোর জীবাণুতে, পোষা প্রাণীতে, পুষ্পরেণুতে, ছত্রাকে এবং কিছু খাদ্যে।
অ্যালার্জি উত্পাদনের জেনেটিক প্রবণতাকে বলা হয় অ্যাটোপি। যেসব লোকের অ্যাটোপিক জেনেটিক প্রবণতা থাকে তাদের বলা হয় অ্যাটোপিক।
যখন অ্যাটোপিক ব্যক্তি অ্যালার্জেনের সামনে উন্মুক্ত হয়, তখন তার মধ্যে এক প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তা থেকে তৈরি হয় অ্যালার্জি প্রদাহ (লাল হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া)।
এর ফলে উপসর্গ দেখা যায় রোগীর বিভিন্ন অংশে। যেমন—
ক্স নাক এবং চোখ—হে ফিভার (অ্যালার্জিক রাইনাইটিস/ কনজাংটিভিটিস)
ক্স ত্বক—একজিমা, র্যাশ (চাক বা দানা ওঠা)।
ক্স ফুসফুস—অ্যাজমা।
কোনো বস*ু একজনের ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করলেও অন্যদের ক্ষেত্রে নাও করতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোনো পরিবারে অ্যালার্জি বা অ্যাজমার ইতিহাস থাকলে ওই পরিবারের অন্যদেরও আক্রান্* হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
অ্যালার্জি কি বংশগত রোগ?
অ্যালার্জি যে কোনো বয়সেই হতে পারে এবং বংশগতির ধারা এ রোগ বিস*ারে অত্যন্* গুরুত্বপূর্ণ । বাবা-মায়ের একজনের অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে তাদের সন্*ানদের মধ্যে এটি হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ, আবার বাবা-মায়ের দু’জনই আক্রান্* হলে তাদের সন্*ানদের আক্রান্* হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ। আবার অ্যালার্জিক বাবার চেয়ে অ্যালার্জিক মা বেশি দায়ী এ রোগের বিস*ারে। তবে অ্যালার্জি জীবাণুবাহিত বা ছোঁয়াচে রোগ নয়।
অ্যালার্জির উপসর্গসমূহ
অ্যালার্জি শরীরে অনেক জায়গায় অনেকভাবে হতে পারে এবং উপসর্গও বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে। যেমন :
অ্যালার্জিজনিত স্বর্দি : এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হ্যাচ্ছি আসা, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
একজিমা : চামড়া শুকনো খসখসে হয়ে যাওয়া বা কালো হয়ে যায়।
অ্যাজমা/হাঁপানি : নিত্য উপসর্গ হচ্ছে কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ লাগা।
খাওয়ার অ্যালার্জি : উপসর্গ পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং ডায়রিয়া ।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত অ্যালার্জি : এটা খুবই মারাত্মক। অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটা শুরু হয়ে যেতে পারে। নিম্নে উল্লিখিত কয়েকটি উপসর্গ হতে পারে—
— চামড়ায় লাল হয়ে ফুলে ওঠে, চুলকায়
— শ্বাসক*, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ
— মূর্ছা যেতে পারে
— রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে
অ্যালার্জির প্রধান কারণগুলো
— মাইট (যা ঘরের পুরনো ধুলাবালিতে থাকে)
— ফুলের রেণু/পরাগ
— খাদ্যদ্রব্য
— ঘরের ধুলো-ময়লা
— প্রাণীর পশম এবং চুল
— পোকামাকড়ের কামড়
— ওষুধসহ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য
— প্রসাধন সামগী প্রভৃতি।
যে কেউ অ্যালার্জিতে আক্রান্* হতে পারে?
হ্যাঁ। তবে বাচ্চাদের এবং অল্প বয়স্কদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলেই অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়। অনেক সময় কয়েক মিনিটের মধ্যে দু’একটা উপসর্গ দেখা দেয়। অন্য উপসর্গগুলো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ২-৪ ঘণ্টার মধ্যে দেখা দেয়। উপসর্গগুলো ১ থেকে ৩ দিন থাকতে পারে। বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি বিভিন্ন সময়ে আপনার জীবনে সমস্যা সৃ*ি করতে পারে।
শরীরের কোন অঙ্গ আক্রান্* হতে পারে
এটা নির্ভর করে অ্যালার্জেনের ধরনের ওপর। যেমন পুষ্পরেণু যখন নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে তখন উপসর্গ দেখা দেয় নাকে, চোখে, সাইনাসে এবং গলায় (হে ফিভার)। খাদ্য অ্যালার্জিতে দেখা দেয় পাকস্থলি এবং অন্ত্রের সমস্যা। সেই সঙ্গে শরীরে রাশ। একই আলার্জির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
নাক, চোখ, সাইনাস এবং গলা : যখন অ্যালার্জেন নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে, তখন নিঃসৃত হিস্টামিনের কারণে নাকের ভেতরের স*র থেকে প্রচুর মিউকাস নির্গত হয় ফলে নাক ফুলে যায় এবং প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে নাক থেকে পানি ঝরতে থাকে, চুলকানি এবং হাঁচি হয়। চোখ থেকে পানি ঝরে এবং গলাফুলা হতে পারে।
বুক এবং ফুসফুস : অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। অ্যালার্জেন ভেতরে ঢুকলে ফুসফুসের ভেতরের আচ্ছাদন ফুলে ওঠে এবং শ্বাসক* শুরু হয়। সব অ্যাজমার কারণ অ্যালার্জি নয়, তবে অ্যালার্জির ভূমিকা আছে নিঃসন্দেহে।
পাকস্থলি এবং অন্ত্র : বেশিরভাগ রোগের গোলমালের কারণ হচ্ছে তৈলাক্ত এবং মসলাযুক্ত খাবার—অ্যালার্জি নয়। তবে কিছু খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে। শিশুর যদি গরুর দুধে অ্যালার্জি হয় তাহলে একজিমা, অ্যাজমা, পেটে ব্যথা এবং বদহজম দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের দুধ সহ্য হয় না। এর প্রধান কারণ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এটিকে অ্যালার্জি মনে করা ঠিক নয়।
ত্বক : ত্বকে একজিমা (শুষ্ক, লালচে, চুলকানিযুক্ত ত্বক) এবং আর্টিকেরিয়া বেশি দেখা যায়। র্যাশ দেখে অনেক সময় পতঙ্গের কামড় বলে মনে হতে পারে। কিছু খাদ্য অ্যালার্জির কারণেও র্যাশ এবং একজিমা হতে পারে।
মারাত্মক উপসর্গ হলে প্রয়োজন জরুরি চিকিত্সা
বেশিরভাগ অ্যালার্জির উপসর্গ মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের। এতে বড় কোনো সমস্যা হয় না। তবে রোগী ঠিকই অস্বসি* অনুভব করে। কিছু রোগীর অ্যানাফাইলেক্সিস নামক মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়। এই সময় জরুরি ভিত্তিতে চিকিত্সা না করালে জীবন সংশয় দেখা যায়। এই উপসর্গের জন্য যেসব অ্যালার্জেন দায়ী তাদের মধ্যে আছে চিনাবাদাম, পতঙ্গের হুল, ওষুধ এবং সামুদ্রিক মাছ।
রোগ প্রতিরোধের উপায় ও চিকিত্সা
প্রথম ধাপ হচ্ছে অ্যালার্জির সঠিক কারণ খুঁজে বের করা অর্থাত্ সঠিক অ্যালার্জেনকে শনাক্ত কর। পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে অ্যালার্জেনকে এড়িয়ে চলা।
এন্টিহিস্টামিন : অ্যালার্জি রোগীদের প্রথম চিকিত্সা শুরু হয় এন্টিহিস্টামিনের মাধ্যমে। এই ওষুধ মাস্ট সেল থেকে হিস্টামিন নির্গত হওয়া রোধ করে। ফলে জ্বালাময় এবং অস্বসি*কর উপসর্গ কমে যায়।
নাকের স্প্রে এবং চোখের ড্রপ : এসব ব্যবহারে অনেক উপসর্গ থেকে ত্বরিত্ মুক্তি পাওয়া যায়।
সুনির্দি* অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি : একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্সা পদ্ধতি। এর ফলে রোগ প্রতিরোধক শক্তির প্রতিক্রিয়ার ধরন পরিবর্তিত হয়। এই পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে রোগীর শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অল্প অল্প অ্যালার্জেন নির্যাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যান
নিজে নিজের চিকিত্সা করে রোগীর কালক্ষেপণ না করে একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার রোগমুক্তির জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।
All Tips: Computer Tips, Internet Tips, Printing Tips, Health Tips, Life Tips, Household Tips, Career Tips, Earn By Internet, Phone Tips, Photography Tips, Fashion Tips, Hair Tips, Summer Tips, Travel Tips, Winter Tips etc.
All Blog: All Travel Way, Recipe BD, All Health BD, Dhaka All, Bangla Poetry, Bird sanctuary bd, Wallpaper All Free, Free Treatment Bd etc.
All Blog: All Travel Way, Recipe BD, All Health BD, Dhaka All, Bangla Poetry, Bird sanctuary bd, Wallpaper All Free, Free Treatment Bd etc.
No comments:
Post a Comment